সিরাজদ্দৌলা Madhyamik Bengali Suggestion 2024
সিরাজদ্দৌলা Madhyamik Bengali Suggestion 2024 | মাধ্যমিক হারিয়ে যাওয়া কালি কলম সাজেশন ২০২4 যদি যদি কোন কিছু বাদ পড়ে যায় তাহলে কিন্তু তোমরা অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবে। আমরা এই যে সাজেশন তৈরি করে দিলাম এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য তো অবশ্যই কিন্তু full সাজেশনটা আপনারা কমপ্লিট করে নেবেন কারণ সমস্ত প্রশ্ন মাথায় রেখে এই সাজেশনটা তোমাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নিচে পিডিএফও দেওয়া রয়েছে অবশ্যই তোমরা পিডিএফ তাকে করে নেবে এবং তোমাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে অবশ্যই শেয়ার করে দেবে। Madhyamik Bengali সিরাজদ্দৌলা Suggestion 2024
যদি কারো কোন কিছু জানার থাকে বা বলার থাকে অবশ্যই নিজের কমেন্ট বক্সটিতে ক্লিক করে কমেন্ট করে দেবেন তাহলে আমাদেরও বুঝতে সুবিধা হবে কার কোথায় অসুবিধা রয়েছে বা সুবিধা হচ্ছে। Madhyamik Bengali সিরাজদ্দৌলা Suggestion 2024
আশা করব সম্পূর্ণ সাজেশনটা তোমাদের খুব কাজে আসবে তাই অনেক কষ্ট করে এই সাজেশনটা বানানো হয়েছে।
Madhyamik Bengali সিরাজদ্দৌলা Suggestion 2024 দেবে তাদের জন্য কিন্তু এই অংকে সাজেশনটা তৈরি করা হয়েছে। ২০২৩ এর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের যদি আরও কোন সাজেশন লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুন বা আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন এবং সার্চ বক্সে আপনি আপনার প্রশ্নটি লিখুন দেখবেন তার উত্তর নিচে আপনারা পেয়ে যাবেন এবং সমস্ত সাবজেক্টের সাজেশন প্রশ্ন উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েব পেজটাকে বুক মার্ক করে রাখুন তাতে তোমাদের সুবিধা হবে।
চাইলে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলেও যুক্ত হতে পারো টেলিকম চ্যানেলের লিংক নিচে দেওয়া রয়েছে ধন্যবাদ। Madhyamik Bengali সিরাজদ্দৌলা Suggestion 2024
মাধ্যমিক সিরাজদ্দৌলা সাজেশসাজেশন ২০২৪
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর| সিরাজদ্দৌলা (শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ) – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৪| Madhyamik Bengali Hariya Jawa Kali Kolom Question and Answer 2024 :
1. “এইবার হয় তাে শেষ যুদ্ধ!” কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কেন? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তর :শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে পলাশীর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
বাংলার নবাব হিসেবে সিংহাসন লাভ করার পর থেকেই সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করা হয়েছিল। আসলে অপুত্রক নবাবের দৌহিত্র সিরাজকে বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারি হিসেবে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। এমনকি, সিরাজের সিংহাসনে বসা নিয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের মনেও ক্ষোভ ছিল। ধূর্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর পূর্ণ সুযোগ নিয়েছিল। তারা সিরাজের আত্মীয়স্বজনদের মন বিষিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর সভাসদদের নবাব-বিরোধী কাজে প্ররোচিত করেছিল। একইসঙ্গে তারা সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন শুরু করে দিয়েছিল। পলাশির প্রান্তরে যে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সিরাজ সে খবর জানতেন। কথা প্রসঙ্গে সেই কথাই তিনি বেগম লুৎফাকে বলেছিলেন।
সিরাজ এই পলাশির যুদ্ধকেই ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কারণ তিনি জানতেন যে, এই যুদ্ধে ইংরেজদের হারাতে পারলে ইংরেজদের প্রতিহত করা সম্ভব হবে এবং তিনি যদি হেরে যান তবে তাঁকে প্রাণে মরতে হবে।
2. আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই, আছে শুধু প্রতিহিংসা’— উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
ঘসেটি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো। অথবা ‘ছল করে ধরে এনে, পাপপুরীতে বন্দিনী করে রাখলে, তোমাদের আমি ক্ষমা করব’ – বক্তা কে? উক্তির আলোকে তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
“ওর নিঃশ্বাসে বিষ, দৃষ্টিদৃ তে আগুন, অঙ্গ সঞ্চালনে ভূমিকম্প”—উক্তির আলোকে ঘসেটি চরিত্রটি আলোচনা করো।
উৎস : বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজ-উদ্দৌ দ্ লা’ নাট্যাংশের ঘসেটি বেগম একজন হৃদয়হীনা প্রতিহিংসাপরায়ণ নারী চরিত্র। পাঠ্য নাট্যাংশে তার সংলাপ সংখ্যা মাত্র ১৯টি। কিন্তু এই সামান্য কয়টি সংলাপেই তিনি তার কুটিল স্বরূপটি আমাদের সামনে উন্মোচন করেছেন —
- ষড়যন্ত্রকারী এবং দেশদ্রোহী : সিরাজ বিরোধী চক্রান্তের মধ্যমণি ছিলেন ঘসেটি বেগম। তিনি সিরাজের দুঃখ- যন্ত্রণায় বেদনার্ত নন বরং উল্লসিত। বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার যাবতীয় প্রয়াসের বিরুদ্ধে তিনি গর্রিত বিদ্রোহিনী।
- প্রতি হিংসা পরায়ণা : পালিত পুত্রকে সিংহাসনে বসিয়ে ক্ষমতা দখল করার যে স্বপ্ন ঘসেটি দেখেছিল, শওকতজঙকে হত্যা করে সিরাজের সিংহাসন আরোহণে তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। নবাব ঘসেটিকে নিজ দরবারে নজর বন্দি করে রাখেন। ঘসেটির হৃদয়ে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে প্রতিহিংসার দাবানল। তিনি নিজেই বলেছেন, “আমার রাজ্য নেই, রাজনীতিও নেই। আছে শুধুপ্রতিহিংসা।”
- হৃদয়হীনা : কুটচক্রী এই নারীর প্রধান অস্ত্র হল তার ভর্ৎসনা এবং অভিশাপ। তার হৃদয়ে মায়া-মমতার বিন্দুমাত্র প্রকাশ নেই। ক্ষমতার লোভ আর প্রতিহিংসা তাকে করে তুলেছিল হৃদয়হীনা।
এক কথায় বলতে গেলে, তিরস্কার আর অভিসম্পাতে মুখরা এই স্বার্থপর ঘসেটি বেগম ছিলেন সিরাজের “ঘর শত্রু বিভীষণ”।
3. ‘এইবার হয়তো শেষ যুদ্ধ’ – কোন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? তাকে শেষ যুদ্ধ বলেছেন কেন?
উত্তর : শচীন সেনগুপ্তের ‘সিরাজউদ্দোল্লা’ নাটকে উদ্ধৃতাংশে পলাশির যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। সিরাজউদ্দোল্লা সিংহাসনে বসার পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। একদিকে যেমন ঘসেটি বেগম, শওকতজঙ্গ তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল; অন্যদিকে তার অনুগত কর্মচারী মীরজাফর, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, রাজা রাজবল্লভ এনারাও সিরাজের পক্ষে ছিলেন না। আবার সিংহাসনে বসার পরেই নবাব জড়িয়ে পড়েছিলেন ইংরেজদের সঙ্গে আত্মলি নগরের যুদ্ধে। ইংরেজরা সেই যুদ্ধের প্রতিশোধ নেবার জন্য মুখিয়ে ছিল। এই অবস্থায় ঘরে-বাইরে বিপদের মুখে বিব্রত ‘সিরাজউদ্দোল্লা’ বুঝেছিলেন যে বাংলার ভাগ্যাকাশে ঘনিয়ে এসেছে দুর্যোগের ঘনঘটা যা রূপ নেবে কোনো যুদ্ধের। আর সেই যুদ্ধে যদি তিনি জেতেন তাহলে তিনি তার সার্বভৌমত্ব স্থাপন করতে পারবেন, কিন্তু যদি হেরে যান তাহলে তিনি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। এই জন্য এই যুদ্ধকে তিনি শেষ যুদ্ধ বলেছেন।
4. জাঁহাপনা! নীচের এই স্পর্ধা’ — কাকে ‘নীচ’ বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে? ১+৩
অথবা,
‘নীচপদস্থ কর্মচারীদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাজের সমালোচনা করা উচিত নয়’ — কে কোন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন?
অথবা,
‘এই তরবারি স্পর্শ করে আমি শপথ করছি জাঁহাপনা’—বক্তা কোন শপথ কেন নিয়েছিলেন?
উৎস : বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজ-উদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে প্রদত্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে।
নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর মীরমদনকে ‘নীচ’ বলে সম্বোধন করেছেন।
ষড়যন্ত্রকারী ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে দরবার থেকে বিতাড়নের পর, সিরাজের সঙ্গে অন্যান্য সভাসদেরা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় মীরজাফর বলে ওঠেন—মানি লোকেদের এভাবে অপমান করলে তিনি আর কখনোই সিরাজের পক্ষে অস্ত্র ধরবেন না। মীরজাফরের এই মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে –
(ক) মোহনলাল জানতে চান : তিনি কবে নবাবের পক্ষে অস্ত্র ধারণ করেছেন?
(খ) মীরমদন বলেন : কলকাতা জয় থেকে পূর্ণিয়া বিজয় পর্যন্ত মীরজাফর করে নবাবকে সাহায্য করেছেন?
প্রধান সেনাপতির কাছে অধঃস্তনদের এই সব প্রশ্নে স্বাভাবিকভাবেই মীরজাফর অস্বস্তিতে পড়েন। নিজের দোষ ঢাকতে, তিনি মীরমদনের প্রশ্নটিকে ‘নীচের আস্পর্ধা’ বলে বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চান।
6. ‘আর কত হেয় করতে চান আপনারা?’— ‘আপনারা’ বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে তারা কীভাবে বক্তাকে হেয় করেছেন?
উৎস : শচীন সেনগুপ্তের ‘সিরাজউদ্দোল্লা’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত এই অংশে ‘আপনারা’ বলতে সিরাজ তার সভার গুরুত্বপূর্ণসভাসদ অর্থাৎ মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠকে বোঝাতে চেয়েছেন।
এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তরুণ নবাব সিরাজকে ন্যূনতম শ্রদ্ধা বা সম্মান করতেন না। তারা চেয়েছিলেন নবাব তাদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবেন, কিন্তু সিরাজের অনমনীয় চরিত্রের জন্য তা সম্ভব হয়নি। তাই নবাবকে অপদস্থ করতে, তাকে পদচ্যুত করতে এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অন্যান্য কর্মচারীদের মনে এবং দেশের মানুষের মনে নবাবের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
7. ‘নীচের এই স্পর্ধা’ ‘নীচ’ কাকে বলা হয়েছে? এর দ্বারা বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় দাও।
উৎস : শচীন সেনগুপ্তের ‘সিরাজউদ্দোল্লা’ নাট্যাংশে ‘নীচ’ বলতে বোঝানো হয়েছে মীরমদনকে অধিকাংশটির বক্তা মীরজাফর। মীরজাফর যখন সিরাজউদ্দোল্লাকে বলেছিলেন যে তার স্বপক্ষে তিনি অস্ত্র ধারণ করবেন না, তখন মীরমদন তাকে প্রশ্ন বলেছিলেন কলকাতা থেকে শুরু করে পূর্ণিয়া বিজয়, কখনোই মীরজাফর নবাবকে সাহায্য করেননি পদমর্যাদায় মীরমদন ছিলেন মীরজাফরের নীচে। মীরমদন গোলন্দাজ বাহিনীর সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। তাই একজন নীচুতলার সৈনিকের কাছ থেকে একথা শুনে মীরজাফর অপমানিত বোধ করেছেন। এই অংশে নিজের পদ মর্যাদা ও সম্মান বিষয়ে মীরজাফরের সচেতনতা, তার অহংকার ও অসহিষ্ণুতার পরিচয়ই আমরা পাই।
8. ‘আর কত হেয় করতে চান আপনারা?’— ‘আপনারা’ বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে তারা কীভাবে বক্তাকে হেয় করেছেন?
উৎস : শচীন সেনগুপ্তের ‘সিরাজউদ্দোল্লা’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত এই অংশে ‘আপনারা’ বলতে সিরাজ তার সভার গুরুত্বপূর্ণসভাসদ অর্থাৎ মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠকে বোঝাতে চেয়েছেন।
এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তরুণ নবাব সিরাজকে ন্যূনতম শ্রদ্ধা বা সম্মান করতেন না। তারা চেয়েছিলেন নবাব তাদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবেন, কিন্তু সিরাজের অনমনীয় চরিত্রের জন্য তা সম্ভব হয়নি। তাই নবাবকে অপদস্থ করতে, তাকে পদচ্যুত করতে এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অন্যান্য কর্মচারীদের মনে এবং দেশের মানুষের মনে নবাবের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
9. “দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা।”- বক্তা কে? তারা কেন দরবার ত্যাগ করতে চান? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তর : শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে মীরজাফর একথা বলেছেন।
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্ররোচনায় সিরাজের সভাসদদের একাংশ রাজদ্রোহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। সেই দলে ছিলেন মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগতশেঠ প্রমুখ। আলোচ্য অংশে ‘আমরা’ বলতে এইসকল সভাসদদের বোঝানো হয়েছে। তারা নবাবের দরবার ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।
আসলে নবাব-বিরোধী সভাসদদের প্রধান মন্ত্রনাদাতা ছিলেন জনৈক ইংরেজ কর্মচারি ওয়াটস। এই ওয়াটস ছিল নবাবের দরবারে নিযুক্ত ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রতিনিধি। রাজদ্রোহে লিপ্ত থাকার অপরাধে সিরাজ তাকে দরবার থেকে বিতাড়িত করেন। রাজা রাজবল্লভ এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে নবাব রাজদ্রোহী সভাসদদের সতর্ক করে বলেন যে সকলের কুকীর্তির খবর তিনি রাখেন। এই প্রসঙ্গে নবাব-অনুগামী মোহনলাল এবং মীরমদন নবাবের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানায়। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলে, “আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না”। তাদের কথায় অপমানিত বোধ করেন নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর। সেইজন্য তিনি স্বপক্ষীয় সভাসদদের সঙ্গে দরবার ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।
10. “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।”- কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন্ দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন ? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তর : শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ তাঁর সভাসদদের উদ্দেশ্যে একথা বলেছিলেন।
সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করার পর থেকেই বাংলার রাজনৈতিক বাতাবরণ যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল। একদিকে তাঁর নিজের আত্মীয়স্বজনরা তাঁর বিরুদ্ধে নানারকম চক্রান্ত শুরু করেছিল তো আরেকদিকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবকে পর্যুদস্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। নবাব নিজে ইংরেজদের দুরভিসন্ধির কথা বুঝতে পারলেও তাঁর সভাসদরা ইংরেজদেরকেই আপন ভেবেছিল এবং নবাব-বিরোধী ষড়যন্ত্রে হাত মিলিয়েছিল।
এদিকে, দিন দিন ইংরেজদের ধৃষ্টতা লাগামছাড়া হয়ে উঠেছিল। কলকাতায় দুর্গ স্থাপন, জোর করে ফরাসি বাণিজ্যকুঠি দখল ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে কোম্পানির সঙ্গে নবাবের তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। নবাবের দরবারে নিযুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসের গোপন চিঠি আবিষ্কার হওয়ার পর নবাব জানতে পারেন যে কোম্পানি সেনা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ-অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আলোচ্য অংশে সিরাজ এই দুর্দিনের কথা বলতে চেয়েছেন।
11. “ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখাে।” – বক্তা কে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনােভাব লক্ষ্য করা যায়? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তর : শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে একথা বলেছিল সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগম।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ সিরাজের প্রতি ঘসেটি বেগমের অত্যন্ত বিরূপ মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। ঘসেটি সিরাজের মাসি হলেও সিরাজ তাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন কিন্তু সিরাজের প্রতি ঘসেটির আচরণ সন্তানসুলভ ছিল না। ঘসেটি বেগম সিরাজকে শুধু ঘৃণাই করত না বরং মনে মনে সে সিরাজের পতন কামনা করত।
সিরাজের জন্য ঘসেটি গৃহহারা হয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে সিরাজ তাকে মতিঝিল থেকে এনে নবাবের অন্দরমহলে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। তার সঞ্চিত সম্পদ থেকেও তাকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন সিরাজ। তাছাড়া, যে সিংহাসনে সিরাজ উপবিষ্ট হয়েছিলেন সেই সিংহাসনের একজন দাবিদার ছিল ঘসেটির পালিত পুত্র। আর এইসব কারণে ঘসেটির মনে ক্ষোভের অন্ত ছিল না। সে এতটাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছিল যে সিরাজের সামনেই তাঁর মৃত্যুকামনা করতে ভয় পায়নি। কোম্পানির ফৌজ মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে সিরাজকে পরাস্ত করুক, এই ছিল তার একান্ত বাসনা।
12. “বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়।” – মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”- কাদের উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে? এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বস্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে? [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর : শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজ তার বিদ্রোহী সভাসদদের উদ্দেশ্য করে একথা বলেছিলেন। এই বিদ্রোহী সভাসদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা রাজবল্লভ, ভাগ্যবান জগৎশেঠ, শক্তিমান রায়দুর্লভ প্রমূখ।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। একইসঙ্গে, সিরাজের এই উক্তি নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের ভাবনায় উজ্জ্বল।
বস্তুতপক্ষে, সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করার পর বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই সিরাজকে বাংলার নবাব হিসাবে মেনে নিতে পারেনি। এই বিষয়ে নবাবের অন্দরমহলে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ ছিল তেমনি রাজকর্মচারীদের মনেও অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। স্বাধীনচেতা নবাবকে নিয়ে ঘরে-বাইরে নানা অপবাদ রটানো হয়েছিল। কিন্তু উদ্ধৃত উক্তির মাধ্যমে সিরাজ বলতে চেয়েছেন যে তিনি কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন নন। তিনি নিজে একজন মুসলমান হলেও বাংলার মাটিতে হিন্দু-মুসলমানের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। আবার, নিজের মাতৃভূমিকে মনোরম ‘গুলবাগ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
13. “মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।”- কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর : উত্তরঃশচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে জনৈক অ্যাডমিরাল ওয়াটসন সিরাজের দরবারে নিযুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে এই পত্র লিখেছিলেন।
আলোচ্য পত্রে বাংলার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিল। তবে সমগ্র পত্র পাঠ করা হয়নি। নবাবের আদেশ অনুযায়ী ওয়াটস পত্রের শেষের দিকটা পড়েছিল এবং মুন্সিজি সেই অংশটুকু বাংলায় তর্জমা করে সভাসদদের শুনিয়েছিল।
এতে লেখা ছিল যে, কর্নেল ক্লাইভ উল্লেখিত সৈন্যবাহিনী শীঘ্রই কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। অ্যাডমিরাল ওয়াটসন আরো লেখেন যে, তিনি তাড়াতাড়ি আরেকটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দিতেন বাংলায় আরো সৈন্য এবং জাহাজ পাঠানোর জন্য। উক্ত পত্রে ভীতি প্রদর্শনের সুরে বলা হয়েছিল যে বাংলায় তিনি এমন আগুন জ্বালাতেন যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যেত না।
14. ‘সিরাজদৌল্লা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌল্লার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তর : শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের প্রধান চরিত্র হল বাংলার নবাব সিরাজ। আলোচ্য নাট্যাংশে সিরাজ চরিত্রের যে দিকগুলি ফুটে উঠেছে সেগুলি হল –
- দক্ষ শাসক : সিরাজ একজন দক্ষ নবাব ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব রাজকর্মচারী ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করেছিল তাদের সকলকে তিনি হাতেনাতে ধরেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসের গোপন চিঠি তিনি যেমন আবিষ্কার করেছিলেন তেমনি তাঁর অনেক সভাসদের কুকীর্তির কথাও তিনি জানতেন।
- বিচক্ষণ : সিরাজ একজন বিচক্ষণ রাজনীতিক ছিলেন। তাঁর অনেক সভাসদ ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলালেও তিনিই প্রথম বুঝেছিলেন ইংরেজদের দুরভিসন্ধির কথা।
- দেশপ্রেমী : মীরজাফর সহ অনেক রাজকর্মচারী নবাব-বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সিরাজ তাদের শাস্তি দেননি বরং বাংলার দুর্দিনে হাতে হাত রেখে লড়াই করার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। দেশকে ভালোবেসে তিনি তাঁর সভাসদদের অপরাধ মার্জনা করে দিয়েছিলেন।
- অসাম্প্রদায়িক : সিরাজ নিজে একজন মুসলমান হলেও বাংলার মাটিতে হিন্দুদের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, “মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”
- দূরদর্শী : ইংরেজরা জোর করে ফরাসি বাণিজ্যকুঠি দখল করছে জেনেও সিরাজ নিজের সৈন্যবল এবং রাজকোষের কথা ভেবে ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চাননি।
- মানবিক : ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-র প্রতি তাঁর বিনয়, ঘসেটি বেগমের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং বিপথগামী সভাসদদের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি সিরাজ চরিত্রটিকে আরো বেশি মানবিক করে তুলেছে।
15. “কিন্তু ভদ্রতার অযােগ্য তােমরা”- কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? একথা বলার কারণ কী? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তর : উত্তরঃশচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে নবাবের দরবারে নিযুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে।
আলিনগরের সন্ধির শর্তগুলি যাতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঠিকমতো পালন করে সেইজন্য কোম্পানির প্রতিভূ হিসেবে ওয়াটসকে সিরাজ তাঁর দরবারে স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াটস গোপনে সিরাজের বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করেছিল। সিরাজের সিংহাসনে বসা নিয়ে তাঁর কয়েকজন কর্মচারীর মনে যে অসন্তোষ ছিল, ওয়াটস সেই ক্ষোভের আগুনে ইন্ধন জুগিয়েছিল। সে মীরজাফর সহ কয়েকজন রাজকর্মচারীকে নবাবের বিরোধিতা করার জন্য প্ররোচিত করেছিল।
এছাড়া, ওয়াটস কলকাতায় ইংরেজদের উপদেশ দিয়েছিল যাতে তারা সিরাজের আদেশ অগ্রাহ্য করে। তার চিঠিতে একথা স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, “নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব। চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।”
তার উদ্দেশ্যে লেখা অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্র পড়ে জানা যায় যে ওয়াটস সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
সিরাজের বিরুদ্ধে এহেন চক্রান্ত করার জন্যই সিরাজ বলেছিওএন যে, তারা অর্থাৎ ইংরেজরা ভদ্রতার অযোগ্য।
16. ‘এ ভীতিপ্রদর্শনের অর্থ কী’—কে, কাকে কথাটি বলেছেন? ভীতিপ্রদর্শন কীভাবে করা হয়েছিল? ১+৩
অথবা,
‘এই পত্রের মর্মসভাসদদের বুঝিয়ে দিন’ — পত্রটি কে লিখেছিলেন? পত্রটির মর্মকথা লেখো।
অথবা,
‘বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব’ — এমন মন্তব্যের কারণ কী?
অথবা,
‘অ্যাডমিরাল এ কথা লিখিয়াছেন কেন আমি বুঝিনা’ — বক্তা কে? অ্যাডমিরাল কী লিখেছিলেন?
অথবা,
‘এই পত্র সম্বন্ধে তুমি কিছু জান?—বক্তা কাকে একথা বলেছেন? পত্রটির বিষয়বস্তু ও গুরুত্ব লেখো।
উৎস : বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজ-উদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে প্রদত্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে।
বাংলার নবাব সিরাজ-উদদৌলা ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসের উদ্দেশ্যে এই কথাটি বলেছিলেন।
ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতা স্বর্ণলতার মতো বেঁধে ফেলেছিল বাংলার তরুণ নবাবকে। সেই ষড়যন্ত্রের অশনি সংকেতই দেখতে পাওয়া যায় ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসের উদ্দেশ্যে লেখা অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের চিঠিতে। সে চিঠিতে লেখা ছিল হাড় হিম করা নানা তথ্য।
(ক) কর্নেল ক্লাইভের পরামর্শ মতন ইংরেজ সৈন্যরা অতি দ্রুত কলকাতাতে পৌঁছোবে।
(খ) ওয়াটসন একটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দেবেন যে, বাংলাকে আক্রমণ করার জন্য আরও সৈন্য প্রয়োজন।
(গ) ‘বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানো যাইবে না।
— ষড়যন্ত্রের ব্লু-প্রিন্ট স্বরূপ এই গোপন পত্রটি ছিল বাংলা তথা নবাবের কাছে বিপদজনক এবং একপ্রকার ভীতি প্রদর্শন।
17. সিরাজ-উদদৌলা নাটক অবলম্বনে মীরজাফর চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তর : প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজ-উদদৌলা’ নাট্যাংশে মীরজাফর একটি খলচরিত্র। একাধিক চারিত্রিক দোষের কারণে এই চরিত্রটি ইতিহাস তথা নাটকের পাতা ছাড়িয়ে বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
চরিত্রে প্রাথমিক পরিচয় : সম্পূর্ণ নাম জাফর আলি খাঁ। তিনি সিরাজের প্রধান সেনাপতি ছিলেন।
চরিত্র বিশ্লেষণ : মীরজাফর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে –
- চক্রান্তকারী : সিরাজের প্রধান সেনাপতি হওয়া সত্ত্বেও তিনি ইংরেজদের সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে বাংলার সর্বনাশের পথ প্রশস্ত করেছিলেন। অন্নদাতার বিরুদ্ধেই তিনি চক্রান্তে তৎপর ছিলেন।
- অহঙ্কারী : মীরজাফরের আত্মঅহংকার ছিল প্রবল। কলকাতা জয় থেকে শুরু করে পূর্ণিয়ার যুদ্ধ পর্যন্ত নবাবের পক্ষে একদিনও অস্ত্র না ধরলেও, সে অনুতপ্ত নয়। অন্যান্য সেনাপতিরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে, দাম্ভিকের মতো সে বলে উঠেছে — নীচের এই স্পর্ধা’।
- অসহিষ্ণুতা : নবাবের সঙ্গে কথোপকথনের সময় মীরজাফরের উগ্রতাই প্রকাশিত হয়েছে। নবাবের পক্ষে অস্ত্র না ধারণের হুমকি থেকে শুরু করে মীরমদন-মোহনলালকে অপমান—সর্বক্ষেত্রেই তার অসহিষ্ক মনোভাব প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে।
- বিশ্বাসঘাতক : সিরাজকে সবসময় সর্বক্ষেত্রে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মীরজাফর তা ভঙ্গ করেছিলেন।
— এককথায় বলতে গেলে মীরজাফর হলেন প্রবঞ্চক, শঠ, স্বার্থপর, ষড়যন্ত্রকারী এবং প্রতারক।
18. ‘আমরা নবাবের নিমক বৃথা খাই না, এ কথা তাদের মনে রাখা উচিত’—কে, কোন্প্রসঙ্গে এ মন্তব্যের অবতারণা করেছেন?
অথবা,
‘নবাব থাকুক তার কর্মক্ষম, শক্তিমান পুরুষ বিচক্ষণ মন্ত্রী আর সেনাপতিদের নিয়ে’—কে, কোন্প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন?
অথবা, ‘আর ভাবনা —বক্তা কে? কেন আর ভাবনা নেই বলে তার অভিমত?
উত্তর : বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজ-উদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে প্রদত্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে।
প্রদত্ত অংশের বক্তা হলেন নবাবের একান্ত অনুগত এবং বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন।
মন্তব্যের কারণ/মন্তব্যের প্রসঙ্গ : ষড়যন্ত্রকারী ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে দরবার থেকে বিতাড়নের পর সিরাজের সঙ্গে অন্যান্য সভাসদেরা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। ইংরেজদের পদলেহনকারী অমাত্যরা যখন নবাবের অন্নে প্রতিপালিত হয়েও নবাবকে উৎখাত করে বাংলার সর্বনাশের পথ প্রশস্ত করতে ব্যস্ত, তখনই নবাবের দুই বিশ্বস্ত প্রতিনিধি মোহনলাল ও মীরমদন নবাবের পাশে দাঁড়ান। মীরমদন ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে দৃঢ়দৃ কণ্ঠে বলেন –
(ক) নবাবকে আত্মরক্ষা বা সিংহাসন রক্ষায় অক্ষম বলে যারা ভাবছেন, তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করেন।
(খ) নবাবের তথা অন্নদাতার মর্যাদা রক্ষার জন্য তার মতো বিশ্বস্ত সেনারা আজও জীবিত। কারণ তারা নেমকহারাম নুন-এর মূল্য দিতে তারা জানেন
19. ‘ আপনার চোখে জল যে আমি সইতে পারি না ।। -বক্তা কে ? এখানে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চোখে জল কেন বুঝিয়ে দাও । উত্তর / শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির বক্তা নবাব সিরাজের স্ত্রী লুৎফা – উল – নেসা তথা লুৎফা ।
উত্তর : অপুত্রক নবাব আলিবর্দি তাঁর দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলাকে আপন উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন । সেইমতো আলিবর্দির মৃত্যুর পরে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে সিরাজ বাংলার মসনদে বসেন । কিন্তু তিনি নবাব হওয়ায় অনেকের আশাভঙ্গ হয় ও ঈর্ষাপরায়ণ বঞ্চিতরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে । এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন সিরাজের মাতৃম্বসা ঘসেটি বেগম । তিনি দেওয়ান রাজবল্লভের মাধ্যমে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চোখে সিরাজকে মসনদচ্যুত করার চক্রান্ত করেন । জলের কারণ পরবর্তীকালে মীরজাফর , ইয়ারলতিফ , জগৎশেঠ ও রায়দুর্লভরাও এই দলে যোগ দেন । সিরাজ বিদ্রোহিণী ঘসেটিকে জব্দ করতে নিজপ্রাসাদে নজরবন্দি করেন । কিন্তু বন্দিনি ও প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘসেটির দীর্ঘশ্বাস আর অভিসম্পাতে সিরাজের হৃদয় বেদনা – যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হতে থাকে । তিনি নির্মম হতে পারেন না বলেই মাতৃসমা ঘসেটির কণ্ঠকে চিরতরে থামিয়ে দিতে পারেন না । বরং মানবীয় দুর্বলতায় , শত্রুর বেদনায় নিজেও কষ্ট পান । এই অন্তর্দ্বন্দ্বের জ্বালা – যন্ত্রণাতেই সিরাজের চোখে জল দেখা যায় ।
20.‘ আপনার অভিযোগ বুঝিতে পারিলাম না । বক্তা ” কে ? তার বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি কী ছিল ?
উত্তর : শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত বক্তা কে ? উদ্ধৃতিটির বক্তা নবাব সিরাজের রাজসভায় উপস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ও প্রতিনিধি ওয়াটস ।
শত্রু পরিবেষ্টিত হয়েই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের সিংহাসন লাভ । সিংহাসন লাভের সময় থেকেই নবাবের চারপাশে একদিকে নিজ আত্মীয় ও রাজকর্মচারীরা আর অন্যদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিনিয়ত স্বার্থসিদ্ধির জন্য চক্রান্তের জাল বুনে চলেছিল । আলিনগরের সন্ধির শর্ত রক্ষার্থে তাঁর দরবারে নিয়োজিত ওয়াটস ও কোম্পানির নৌসেনাপতি ওয়াটসনের মধ্যে চক্রান্তপূর্ণ যে – দুটি চিঠির অভিযোগ আদানপ্রদান হয়েছিল তা নবাবের হস্তগত হয় । উদ্ধৃত অংশে ওয়াটসনের চিঠিটির কথা বলা হয়েছে । সেখানে চিঠির শেষের দিকের কয়েকটি ছত্রে চক্রান্তের স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায় । নবাবের আদেশে মুনশি অনুবাদ করে যা শোনায় তার সারমর্ম হল , ক্লাইভের পাঠানো সৈন্য শীঘ্রই কলকাতায় পৌঁছোবে । সেনাপতি ওয়াটসন খুব শীঘ্রই মাদ্রাজে জাহাজ পাঠাবেন এবং কলকাতায় আরও সৈন্য ও জাহাজ পাঠানোর কথা জানাবেন । তাঁর উদ্যোগে বাংলায় আগুন জ্বলে উঠবে । অতএব এই চিঠির মূল উদ্দেশ্য সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে বাংলা দখল । এখানে এই অভিযোগের কথাই বলা হয়েছে ।